হজ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তসমূহ
হজের আভিধানিক অর্থ হলো মক্কা শরিফের ইচ্ছা করা।
শরিয়তে এর অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট স্থানের জিয়ারত করা। (আততা'রিফাত : ১/২৬)
হজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে পুরো উম্মত একমত। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এর ফজিলত বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : 'আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য, যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পেঁৗছার। আর যে লোক তা মানে না, আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।' (আলে ইমরান : ৯৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : 'যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ আদায় করে এবং সেখানে যাবতীয় মন্দ কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকে, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের মতো গুনাহমুক্ত হয়ে ফিরবে।' (বুখারি : ১৪২৪)
হজের শর্ত : নিম্নোলি্লখিত শর্তগুলো পাওয়া গেলে প্রত্যেক নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ।* মুসলমান হওয়া। অমুসলিমের ওপর হজ ফরজ নয়। (বুখারি : ৩৫৬)
* বালেগ হওয়া। নাবালেগের ওপর হজ ফরজ নয়। (বুখারি : ১৬/৩১৫, বায়হাকি : ১০১৩৩)
* বোধসম্পন্ন হওয়া। নির্বোধ পাগলের ওপর হজ ফরজ নয়। (বুখারি : ১৬/৩১৫)
* আজাদ বা স্বাধীন হওয়া। গোলামের ওপর হজ ফরজ নয়। (আলে ইমরান : ৯৭, বায়হাকি : ১০১৩৩)
* সামর্থ্যবান হওয়া। সামর্থ্যবান হওয়ার অর্থ হলো, নিজের অনুপস্থিতিতে পরিবারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা এবং যাতায়াত ও পাথেয়র মালিক হওয়া। (তিরমিজি : ৭৪১)
যদি নিজ খরচে যাওয়ার মতো মাহরাম না থাকে তাহলে নারীদের ক্ষেত্রে নিজের এবং একজন মাহরামের হজে যাওয়া-আসা ও থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ বহনে সামর্থ্যবান হতে হবে।* হজের সময়ের আগমন।
হজ আদায় ওয়াজিব হওয়ার শর্ত : কোনো ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হওয়ার পর নিজে হজ আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার জন্য যেসব শর্ত রয়েছে তা পাওয়া না গেলে নিজে হজ করা ওয়াজিব হবে না। বরং অন্য কোনো ব্যক্তি দ্বারা তৎক্ষণাৎ বদলি হজ করাতে হবে অথবা বদলি হজ করানোর জন্য অসিয়ত করতে হবে। আর নিজে হজ আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হলো :
* শারীরিকভাবে হজ করতে সক্ষম হওয়া। (বায়হাকি : ৮৯২২)
* হজে গমনে প্রতিবন্ধকতা না থাকা। যেমন-কয়েদি বা পরাধীন ব্যক্তি। (বায়হাকি : ৮৯২২)
* রাস্তার নিরাপত্তা থাকা। (সুনানে কুবরা : ৮৯২২)
* নারী যুবতী হোক বা বৃদ্ধা, তার সঙ্গে স্বামী বা অন্য কোনো মাহরাম থাকা। (বুখারি : ১০২৪, দারা কুতনি : ২৪৬৭)
* মহিলা তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর কারণে ইদ্দত অবস্থায় না হওয়া। (সুরা তালাক : ১)
হজ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত : নিম্নোলি্লখিত শর্তগুলো পাওয়া না গেলে হজ আদায় শুদ্ধ হবে না।
* ইহরাম তথা হজের নিয়ত করা। সুতরাং ইহরাম বাঁধা ছাড়া হজ আদায় সহিহ হবে না। (বুখারি : ১)
ইহরামের নিয়ম হলো, মিকাত থেকে তালবিয়া পড়ার মাধ্যমে হজের নিয়ত করা। পুরুষরা ইহরামের সময় সেলাই করা কাপড় খুলে সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করবে। (বুখারি : ১৭০৭)
নারীরা স্বাভাবিক কাপড় পরবে। তবে নেকাব বা অন্য কোনো কাপড় চেহারার সঙ্গে লেগে থাকতে পারবে না।
তালবিয়া এভাবে পড়বে : 'লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ানি্ন'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।' (বুখারি : ১৪৪৮)
* সময়। সুতরাং হজের নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে হজ আদায় সহিহ হবে না। (বাকারাহ : ১৯৭)
* নির্দিষ্ট স্থান। অর্থাৎ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা, তাওয়াফে জিয়ারত বায়তুল্লাহ শরিফে করা, রমি মিনাতে করা এবং পশু কোরবানি হারাম শরিফে করা। যদি সময়মতো আরাফায় অবস্থান করা না হয় তাহলে হজ সহিহ হবে না। (নাসাঈ : ২৯৬৬, সুরা হজ : ২৯)
যারা হজ্বে যাচ্ছেন-
হজ্বে যাচ্ছেন, আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করুন, ‘হে আল্লাহ! আমার হজ্বকে সহজ করো, কবুল করো’ - দেখবেন, আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হজ্বের দীর্ঘ সফরে ধৈর্য হারাবেন না। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মানসিকতা রাখবেন, কোন অবস্থাতেই বিচলিত হবেন না। হজ্বের প্রস্তুতিপর্বে- আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট তৈরি করা, প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা, ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া (অনেকে দালালের মাধ্যমে ১০০ বা ২০০ টাকায় টিকা দেয়ার সনদ সংগ্রহ করেন, এটা কখনোই করবেন না) - হজ্বের এই সব নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন কিংবা যাঁরা পূর্বে হজ্ব পালন করেছেন তাঁদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করুন। হজ্বের কোনো বিসয়ে ভিন্নতা দেখলে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়ে আপনি যে আলেমের ইল্ম ও তকওয়ার ওপর আস্থা রাখেন তাঁর সমাধান অনুযায়ী আমল করবেন, তবে সে অনুসারে আমল করার জন্য অন্য কাউকে বধ্য করবেন না।
- যেন দেহ-মনে কোন কষ্ট না থাকে।
- ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ্ব হলো দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত এবং শ্রমসাধ্য ব্যপার।
- আপনার মালপত্র হলকা রাখুন, কারন আপনার মালমাল আপনাকেই বহন করতে হবে।
- আপনার সঙ্গীদের সম্মান করুন এবং তাঁদের ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
- দলের দূর্বল বয়স্কদের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
- সৌদী আরবে গিয়ে বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজ হারাম শরীফে জামাতে আদায় করার চেষ্টা করবেন।
- যাত্রার শুরুতেই একজন ভালো সফর সঙ্গী খুঁজে নেবেন, যাতে নামাজ আদায় বা ভ্রমনের বিভিন্ন পর্র্যায়ে একে অন্যেও সহায়তা নিতে পারেন।
No comments:
Post a Comment